হার্টবিট কত থাকা উচিত এবং হার্টবিট বেড়ে যাওয়ার কারণ ও সমাধান!

হার্টবিট কত থাকা উচিত?

“হার্টবিট কত থাকা উচিত” – এমন একটি প্রশ্ন যা আমরা প্রায়ই নিজেদের জিজ্ঞাসা করি। আমাদের হৃদস্পন্দন বা হার্টবিট, শুধু একটি সংখ্যা নয়; এটি আমাদের শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং কার্যক্ষমতার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। একটি সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হার্টবিট সাধারণত প্রতি মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ বিটের মধ্যে থাকে। তবে, এই হার বয়স, শারীরিক সক্ষমতা এবং দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। আপনি কি জানতেন, পেশাদার অ্যাথলেটদের হার্টবিট অনেক কম হয়, এমনকি ৪০-৫০ বিট প্রতি মিনিটে? এটি তাদের হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতার উচ্চমান নির্দেশ করে। কিন্তু যদি হার্টবিট এই পরিসরের বাইরে থাকে বা হঠাৎ বেড়ে যায়, এটি শারীরিক সমস্যার সংকেত দিতে পারে।

আজ আমরা আলোচনা করব, “হার্টবিট কত থাকা উচিত”, কেন এটি বেড়ে যেতে পারে এবং এ থেকে বাঁচার উপায়। এমনকি কিছু আকর্ষণীয় তথ্যও তুলে ধরব যা হয়তো আপনাকে অবাক করবে। উদাহরণস্বরূপ, একজন সুস্থ মানুষের হার্ট প্রতিদিন প্রায় এক লক্ষ বার স্পন্দিত হয় এবং সারা শরীরে প্রায় ২০০০ গ্যালন রক্ত পাম্প করে।

হার্টবিট কি?

হার্টবিট হলো হৃদপিণ্ডের একটি স্বাভাবিক সংকোচন ও প্রসারণ প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে রক্ত সারা শরীরে প্রবাহিত হয়। হৃদপিণ্ড মূলত একটি পাম্পের মতো কাজ করে, যা প্রতি স্পন্দনে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে দেয় এবং অক্সিজেনশূন্য রক্ত ফুসফুসে পাঠিয়ে দেয় বিশুদ্ধকরণের জন্য। সাধারণত, একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির বিশ্রাম অবস্থায় হৃদস্পন্দনের হার ৬০-১০০ বিট প্রতি মিনিট (BPM) হয়ে থাকে। হার্টবিট নির্দিষ্ট বৈদ্যুতিক সংকেত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যা হৃদপিণ্ডের সিনোআট্রিয়াল (SA) নোড থেকে উৎপন্ন হয়। এই সংকেত হৃদযন্ত্রের পেশীগুলোতে পৌঁছে তাদের সংকোচিত ও প্রসারিত হতে সহায়তা করে।

হার্টবিটের গুরুত্ব

হৃদস্পন্দন শরীরের সুষ্ঠু কার্যক্রম বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত করে, যা কোষগুলোর স্বাভাবিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। হৃদপিণ্ড সঠিকভাবে কাজ না করলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়তে পারে এবং বিভিন্ন জটিল রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট ফেইলিউর এবং স্ট্রোক। নিয়মিত হৃদস্পন্দন পর্যবেক্ষণ করে হৃদরোগের আগাম সতর্কতা পাওয়া সম্ভব, যা জীবন রক্ষাকারী হতে পারে। সুতরাং, সুস্থ জীবনধারার জন্য সঠিক হার্টবিট বজায় রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

স্বাভাবিক হার্টবিট কত?

স্বাভাবিক হার্টবিট কত? (বিভিন্ন বয়স এবং অবস্থার জন্য স্বাভাবিক পরিসীমা)

“হার্টবিট কত থাকা উচিত” – এই প্রশ্নের উত্তর বয়স, শারীরিক অবস্থা এবং জীবনযাত্রার উপর নির্ভর করে। সাধারণত, নবজাতকদের হার্টবিট ১২০-১৬০ বিট প্রতি মিনিট (BPM) হয়ে থাকে, যা বয়স বাড়ার সাথে সাথে ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ১-১০ বছর বয়সী শিশুদের স্বাভাবিক হার্টবিট প্রতি মিনিটে ৭০-১২০ BPM এর মধ্যে থাকতে পারে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিশ্রাম অবস্থায় হার্টবিট ৬০-১০০ BPM হওয়া স্বাভাবিক ধরা হয়। তবে, সুস্থ ও নিয়মিত শরীরচর্চা করা ব্যক্তিদের (যেমন অ্যাথলেটদের) ক্ষেত্রে এটি আরও কম, প্রায় ৪০-৬০ BPM পর্যন্ত হতে পারে, কারণ তাদের হৃদপিণ্ড দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে সক্ষম হয়।

শারীরিক পরিশ্রম, আবেগ বা মানসিক চাপ এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্যের অবস্থার উপর ভিত্তি করে স্বাভাবিক হার্টবিট পরিবর্তিত হতে পারে। গর্ভাবস্থায় মহিলাদের হার্টবিট সাধারণত একটু বেশি হয়ে থাকে, প্রায় ৭০-১০০ BPM পর্যন্ত। তাছাড়া, বিশ্রামের সময় বা ঘুমের মধ্যে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যায়, যা ৫০-৭০ BPM পর্যন্ত হতে পারে। তাই বয়স, শারীরিক স্বাস্থ্য এবং জীবনধারার ভিত্তিতে “হার্টবিট কত থাকা উচিত” তা ভিন্ন হয়ে থাকে।

হার্টবিট বেড়ে যাওয়ার কারণ (শারীরিক পরিশ্রম, চাপ, অসুখ, ওষুধ)

স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি হার্টবিট হলে তাকে ট্যাকিকার্ডিয়া (Tachycardia) বলা হয়। শারীরিক পরিশ্রম অন্যতম প্রধান কারণ, যা হৃদপিণ্ডকে বেশি রক্ত সরবরাহের জন্য দ্রুত স্পন্দিত হতে বাধ্য করে। দৌড়ানো, ভারী ব্যায়াম, সাঁতার বা সাইক্লিং-এর সময় হার্টবিট বেড়ে যেতে পারে, যা সাধারণত ব্যায়ামের পর বিশ্রামে ফিরে আসে। মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং আতঙ্কের কারণে অ্যাড্রেনালিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়। তীব্র আবেগঘন পরিস্থিতিতেও “হার্টবিট কত থাকা উচিত” তার চেয়ে বেশি হতে পারে।

তাছাড়া, শরীরের বিভিন্ন অসুখ যেমন সংক্রমণ (ফিভার), থাইরয়েডের অতিরিক্ত কার্যকারিতা (হাইপারথাইরয়েডিজম), ডিহাইড্রেশন এবং রক্তস্বল্পতার কারণেও হৃদস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে। কিছু ওষুধ, যেমন ডিকনজেস্ট্যান্ট, ক্যাফেইন বা এলকোহলযুক্ত পানীয় গ্রহণও হৃদযন্ত্রের গতি বাড়িয়ে দিতে পারে। যদি নিয়মিতভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হার্টবিট অনুভূত হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি, কারণ এটি হার্টের অসুখের লক্ষণ হতে পারে।

হার্টবিট কমে যাওয়ার কারণ (হৃদরোগ, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, হাইপোথাইরয়েডিজম)

“হার্টবিট কত থাকা উচিত” তা যদি স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়, তবে তা ব্রাডিকার্ডিয়া (Bradycardia) নামে পরিচিত। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে হৃদস্পন্দন প্রতি মিনিটে ৬০ BPM-এর নিচে নেমে যায়। এটি সাধারণত অ্যাথলেটদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক হতে পারে, কারণ তাদের হৃদপিণ্ড অত্যন্ত দক্ষভাবে কাজ করে। তবে, অস্বাভাবিকভাবে কম হার্টবিট হওয়া হৃদরোগের ইঙ্গিত হতে পারে, বিশেষ করে যদি এর সঙ্গে মাথা ঘোরা, ক্লান্তি বা শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ থাকে।

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, বিশেষ করে বিটা-ব্লকার ওষুধ এবং উচ্চ রক্তচাপ বা অনিদ্রার ওষুধ গ্রহণের ফলে হৃদস্পন্দন কমে যেতে পারে। এছাড়া, থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যক্ষমতা কমে গেলে (হাইপোথাইরয়েডিজম), দেহের মেটাবলিজম ধীর হয়ে হৃদস্পন্দনও কমে যায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার কারণেও “হার্টবিট কত থাকা উচিত” তার চেয়ে কম হতে পারে। যদি হার্টবিট অস্বাভাবিক কম অনুভূত হয়, তবে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

হার্টবিট মাপার উপায় (হাতে ঘড়ি, ফিটনেস ট্র্যাকার, ডাক্তারের পরীক্ষা)

নিজের হার্টবিট নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যদি “হার্টবিট কত থাকা উচিত” তা নিয়ে আপনি সচেতন হতে চান। হাতের কব্জির উপর দুটি আঙুল রেখে ধমনীর স্পন্দন অনুভব করে প্রতি মিনিটের হার্টবিট গুনে নেওয়া একটি সহজ উপায়। এছাড়া, হাতে পরিধানযোগ্য স্মার্টওয়াচ বা ফিটনেস ট্র্যাকার ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হার্টবিট নিরীক্ষণ করা যায়, যা সময় এবং শারীরিক অবস্থার ভিত্তিতে আপনাকে বিশদ তথ্য প্রদান করে।

ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে আরও সুনির্দিষ্টভাবে হৃদস্পন্দন পরিমাপ করা যায়। ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ECG বা EKG) পদ্ধতির মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যক্রম পর্যালোচনা করা হয়, যা হার্টবিটের সঠিকতা নির্ধারণ করতে সহায়তা করে। এ ছাড়াও, ২৪-ঘণ্টার জন্য হল্টার মনিটরিং বা এচোকার্ডিওগ্রাফির মাধ্যমে বিস্তারিত চেকআপ করা সম্ভব। নিজের হার্টের সুস্থতা নিশ্চিত করতে নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে “হার্টবিট কত থাকা উচিত” তা বোঝা এবং যেকোনো অস্বাভাবিকতা নির্ধারণ করা জরুরি।

অস্বাভাবিক হার্টবিটের লক্ষণ (দ্রুত হৃদস্পন্দন, ধীর হৃদস্পন্দন, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন)

আমাদের হৃদস্পন্দন যখন স্বাভাবিক সীমার বাইরে চলে যায়, তখন তা স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। “হার্টবিট কত থাকা উচিত” তা যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়, তখন দ্রুত হৃদস্পন্দনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যা ট্যাকিকার্ডিয়া (Tachycardia) নামে পরিচিত। দ্রুত হার্টবিটের কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো মাথা ঘোরা, বুকে অস্বস্তি, শ্বাসকষ্ট এবং কখনো কখনো অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় গ্রহণ, ডিহাইড্রেশন এবং কিছু চিকিৎসা সংক্রান্ত শর্ত, যেমন হাইপারথাইরয়েডিজমের কারণে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ হার্টবিট অনুভূত হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

অন্যদিকে, যখন “হার্টবিট কত থাকা উচিত” তার তুলনায় অনেক কম হয়, তখন এটি ব্রাডিকার্ডিয়া (Bradycardia) নামে পরিচিত হয়। ধীর হৃদস্পন্দনের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে দুর্বলতা, ক্লান্তি, শ্বাস নিতে কষ্ট, বুকে চাপ এবং বিভ্রান্তি। এই সমস্যা সাধারণত হৃদযন্ত্রের ব্লক, কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা কমে যাওয়ার কারণে হতে পারে। অনিয়মিত হৃদস্পন্দনও (Arrhythmia) একটি গুরুতর সমস্যা, যেখানে হার্টবিট অনিয়ন্ত্রিত বা এলোমেলো হয়ে যায়। এর ফলে বুক ধড়ফড় করা, দুশ্চিন্তাবা শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যা চিকিৎসা না করালে মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন?

আমাদের শরীরে “হার্টবিট কত থাকা উচিত” তা বুঝে তার উপর নিয়মিত নজর রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি কারো হার্টবিট অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত বা ধীর মনে হয় এবং সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা বা মাথা ঘোরা অনুভূত হয়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষত, বিশ্রামের অবস্থাতেও যদি হার্টবিট ১০০ BPM-এর বেশি হয় বা ৫০ BPM-এর কম হয়, এটি সতর্ক সংকেত হতে পারে। অনিয়মিত হৃদস্পন্দন বা হার্টবিটের ধাক্কা যদি দীর্ঘ সময় ধরে অনুভূত হয়, তবে এটি হার্ট অ্যারিথমিয়ার ইঙ্গিত দিতে পারে, যা যথাযথ চিকিৎসা ছাড়া বিপজ্জনক হতে পারে।

যদি কোনো ব্যক্তি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসবা হৃদরোগের ঝুঁকির মধ্যে থাকেন, তবে তাদের নিয়মিত হৃদস্পন্দন পরীক্ষা করা উচিত। তাছাড়া, “হার্টবিট কত থাকা উচিত” তা বুঝতে গেলে ব্যায়ামের পর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে কতটা সময় লাগছে, সেটিও লক্ষ্য রাখা জরুরি। যদি ব্যায়ামের পরে স্বাভাবিক হার্টবিটে ফিরে আসতে দীর্ঘ সময় লাগে, তবে এটি দুর্বল হৃদপিণ্ডের লক্ষণ হতে পারে। পাশাপাশি, যদি অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ক্লান্তি বা বুক ধড়ফড় করা অনুভব হয়, তবে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

স্বাস্থ্যকর হার্টবিটের জন্য কী করবেন?

স্বাস্থ্যকর হার্টবিটের জন্য কী করবেন? (সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, চাপ ম্যানেজমেন্ট)

সুস্থ হৃদযন্ত্র বজায় রাখতে হলে, আমাদের জানতে হবে “হার্টবিট কত থাকা উচিত” এবং সেই অনুযায়ী জীবনযাত্রার পরিবর্তন করতে হবে। স্বাস্থ্যকর হার্টবিট বজায় রাখার জন্য সুষম খাদ্য গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে ফলমূল, শাকসবজি, পূর্ণ শস্য এবং প্রোটিন অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার, যেমন সামুদ্রিক মাছ ও বাদাম, হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়ক। অন্যদিকে, চর্বিজাতীয় এবং অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার পরিহার করা উচিত, কারণ এগুলো উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি করে এবং হৃদস্পন্দনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। সঠিক পুষ্টি হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।

হার্ট অ্যাটাক রুগীর খাবার তালিকা কেমন হওয়া উচিৎ?

নিয়মিত ব্যায়ামও স্বাস্থ্যকর হার্টবিট বজায় রাখতে অপরিহার্য। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য হাঁটা, দৌড়ানো, যোগব্যায়াম বা সাইক্লিং করা হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরে অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়ে, যা হার্টবিটকে স্বাভাবিক মাত্রায় রাখতে সাহায্য করে। যদি আপনি নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করেন, তবে আপনার জানা উচিত “হার্টবিট কত থাকা উচিত” এবং ওভার-এক্সারসাইজের ফলে হার্টবিট অস্বাভাবিকভাবে বাড়ে কিনা তা মনিটর করা উচিত।

চাপ ম্যানেজমেন্ট এবং জীবনধারার পরিবর্তন

স্ট্রেস বা মানসিক চাপ হৃদস্পন্দনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তাই চাপ ম্যানেজমেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গভীর শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম, ধ্যান এবং পর্যাপ্ত ঘুম নেওয়ার মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো সম্ভব। স্ট্রেসের কারণে কর্টিসল এবং অ্যাড্রেনালিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা “হার্টবিট কত থাকা উচিত” তার থেকে বেশি হয়ে যেতে পারে। তাই, প্রতিদিন চাপমুক্ত থাকার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।

এছাড়া, ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণ হৃদযন্ত্রের কার্যক্রমকে ধীরে ধীরে দুর্বল করে তোলে এবং অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের ঝুঁকি বাড়ায়। অতিরিক্ত ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় গ্রহণ পরিহার করাও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেয় এবং উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে। জীবনধারার পরিবর্তনের মাধ্যমে “হার্টবিট কত থাকা উচিত” তা বজায় রাখা সম্ভব এবং দীর্ঘস্থায়ী হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করা যায়। একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণ করে সুস্থ হৃদযন্ত্র এবং স্বাভাবিক হার্টবিট নিশ্চিত করা সম্ভব।

উপসংহার

আমাদের জেনে রাখা উচিৎ যে, হার্টবিট বাড়া বা কমা কেবল শারীরিক অবস্থা নয়, মানসিক চাপ, ঘুমের ঘাটতি, খাদ্যাভ্যাস বা এমনকি জীবনের নিয়মবিহীন রুটিনের প্রতিফলনও হতে পারে।

আপনার হৃদস্পন্দন সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম, পরিমিত খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামের গুরুত্ব অপরিসীম। একইসঙ্গে, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং ধূমপান বা অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা আপনাকে হৃদরোগের ঝুঁকি থেকে অনেকটাই দূরে রাখতে পারে।

আমাদের হার্ট আমাদের জীবন, এটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে এর যত্ন নেওয়া আমাদের সবার দায়িত্ব। তাই নিয়মিত ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়া এবং সচেতন জীবনযাপন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখবেন, একটি সুস্থ হৃদপিণ্ড সুস্থ জীবনযাপনের চাবিকাঠি। আপনার হার্টবিট ঠিক রাখা মানেই আপনার জীবনের গতি ঠিক রাখা। আসুন আমরা আমাদের নিজেদের এবং আমাদের পরিবারের হার্ট সুস্থ রাখতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই। “হার্টবিট কত থাকা উচিত” – এই জ্ঞানকে ছড়িয়ে দিয়ে আমরা আরও অনেকের জীবনকে সুন্দর এবং সুস্থ করতে পারি। তাই শেয়ার করে আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ। 

Related posts

Leave a Comment