মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ কি কি এবং পুরুষদের চেয়ে কতটা ভিন্ন?

মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ কি কি

এক মুহূর্ত কল্পনা করুন –  আপনি ভাবছেন সবকিছু ঠিক আছে, সামান্য একটু ক্লান্তি, হালকা বুকে চাপ বা গ্যাসের সমস্যা বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন। অথচ এই সামান্য উপসর্গই হতে পারে মৃত্যুর নীরব ডাক! বিশেষ করে নারীদের জন্য হার্টের সমস্যা এমনভাবে আসে, যা অনেক সময় নিজেদেরও বুঝে ওঠা সম্ভব হয় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর পৃথিবীতে যত নারী মারা যায়, তার প্রায় এক-তৃতীয়াংশের মৃত্যুর কারণ হলো হৃদরোগ। তবুও, মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ সম্পর্কে আমরা অনেকেই খুব কম জানি বা অবহেলা করি।

চমকে দেয়ার মতো বিষয় হলো, পুরুষদের তুলনায় নারীদের হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ অনেক বেশি “অপ্রচলিত” বা “অস্পষ্ট” হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, হার্ট অ্যাটাক হওয়া নারীদের প্রায় ৪৩% এর ক্ষেত্রে Chest Pain ছিল না- যা পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রধান লক্ষণ হিসেবে দেখা যায়। এর বদলে তারা অনুভব করে অস্বাভাবিক ক্লান্তি, বমি ভাব, শ্বাসকষ্ট এবং ঘাড় বা চোয়ালে ব্যথা। তাই মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ আলাদা করে জানা এবং বুঝা অত্যন্ত জরুরি, যাতে সময়মতো সচেতন হওয়া যায় এবং জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়।

কেন নারীদের ক্ষেত্রে লক্ষণ ভিন্ন হয়?

নারীদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ পুরুষদের তুলনায় অনেক সময় ভিন্ন হয়, কারণ তাদের দেহের শারীরবৃত্তীয় গঠন এবং হরমোনগত ব্যবস্থাপনা ভিন্ন। পুরুষদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক সাধারণত ক্লাসিক্যাল লক্ষণ –  যেমন তীব্র বুক ব্যথা বা বুকে চাপ –  দিয়ে প্রকাশ পায়। তবে নারীদের শরীরে ইস্ট্রোজেন নামক একটি হরমোন হৃদপিণ্ডের রক্তনালীগুলোকে বিশেষভাবে রক্ষা করে, যার কারণে তাদের ক্ষেত্রে হার্টের সমস্যা ভিন্নভাবে প্রকাশিত হতে পারে। নারীদের হার্ট অ্যাটাকের সময় প্রায়ই দেখা যায় –  হালকা বা অস্পষ্ট ব্যথা, গ্যাস্ট্রিকের মতো অস্বস্তি, বমি ভাব, অবসাদ, শ্বাসকষ্ট কিংবা পিঠ, চোয়াল বা গলার ব্যথা। এই লক্ষণগুলো স্পষ্ট বা নাটকীয় না হওয়ায় নারীরা এবং আশেপাশের মানুষরাও অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে চিন্তা করে না, ফলে বিপদ আরও বেড়ে যায়।

এছাড়া, নারীদের হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে প্লাক ফেটে গিয়ে বড় রক্ত জমাট বাঁধার পরিবর্তে ক্ষুদ্র ধমনীগুলোর (Microvascular Disease) সমস্যা বেশি দেখা যায়, যেখানে রক্তনালীগুলো সরু হলেও স্পষ্টভাবে ব্লক না হয়েই রক্তপ্রবাহ কমে আসে। এর ফলে ক্লাসিক্যাল ব্যথার পরিবর্তে দুর্বলতা, ঘাম, নিঃশ্বাসে কষ্ট বা চরম অবসাদের মতো অপ্রচলিত উপসর্গ দেখা দেয়। মানসিক চাপও নারীদের হৃদরোগের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে। এসব কারণে নারীদের হার্ট অ্যাটাক ধরা কঠিন হয় এবং তারা অনেক সময় দেরিতে হাসপাতালে পৌঁছান। তাই নারীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো, অপ্রচলিত লক্ষণগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া এবং দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতে হবে।

হার্ট অ্যাটাকের প্রচলিত বনাম অপ্রচলিত লক্ষণ

হার্ট অ্যাটাকের প্রচলিত লক্ষণ বলতে সাধারণত সেই উপসর্গগুলো বোঝানো হয় যা বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে দেখা যায় এবং যেগুলো হার্ট অ্যাটাকের ক্লাসিক বা চেনাজানা ইঙ্গিত দেয়। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো –  বুকের মাঝখানে তীব্র চাপ, সংকোচন বা ভারী ব্যথা অনুভব করা, যা কখনো কখনো বাহু, ঘাড়, চোয়াল বা পিঠের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় এই ব্যথার সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, অতিরিক্ত ঘাম, বমি বমি ভাব বা মাথা ঘোরা যোগ হতে পারে। পুরুষদের ক্ষেত্রে এসব প্রচলিত লক্ষণ প্রায়ই খুব নাটকীয় ও সহজে শনাক্তযোগ্য হয়, ফলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ থাকে। প্রচলিত লক্ষণগুলো দেখা দিলে সাধারণত দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া হয়, যার ফলে সময়মতো সঠিক চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয়।

অন্যদিকে, অপ্রচলিত লক্ষণগুলো অনেকটাই মৃদু, বিভ্রান্তিকর এবং অস্পষ্ট হতে পারে, বিশেষ করে মহিলাদের, বয়স্কদের ও ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে। অপ্রচলিত লক্ষণের মধ্যে রয়েছে –  চরম অবসাদ বা দুর্বলতা, হালকা শ্বাসকষ্ট, ঠান্ডা ঘাম, হালকা পেটের ব্যথা, বুকের ব্যথা ছাড়াই পিঠ, চোয়াল বা কাঁধে অস্বস্তি অনুভব করা। অনেক সময় এসব লক্ষণকে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা, স্ট্রেস বা ক্লান্তি বলে ভুল করা হয়, ফলে দেরিতে চিকিৎসা শুরু হয় এবং হার্টের ক্ষতি আরও বেড়ে যেতে পারে। অপ্রচলিত লক্ষণগুলির সচেতনতা বাড়ানো খুব জরুরি, কারণ এগুলো দ্রুত শনাক্ত করে দ্রুত পদক্ষেপ নিলে জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়। তাই হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে প্রচলিত এবং অপ্রচলিত –  উভয় ধরনের উপসর্গ সম্পর্কে জানা এবং গুরুত্ব দিয়ে মূল্যায়ন করা অত্যন্ত প্রয়োজন।

মেয়েদের হার্ট অ্যাটাকের সাধারণ লক্ষণ সমূহ

অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা

হার্ট অ্যাটাকের সময় অনেক নারী অস্বাভাবিক মাত্রার ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব করেন, যা কোনো স্বাভাবিক কাজের পরেও অপ্রত্যাশিত মনে হয়। তারা এমনকি হালকা কাজ –  যেমন হাঁটা, রান্না করা বা কাপড় বদলানোর মতো দৈনন্দিন কাজে সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারেন। এই ধরণের অবসাদ হার্টের রক্তসঞ্চালনে সমস্যা দেখা দেওয়ার প্রথম সংকেত হতে পারে। যখন হৃদপিণ্ড যথেষ্ট রক্ত পাম্প করতে ব্যর্থ হয়, তখন শরীরের অঙ্গগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না, ফলে অতিরিক্ত ক্লান্তির অনুভূতি তৈরি হয়।

অনেক নারী এই ক্লান্তিকে স্ট্রেস, বয়সজনিত সমস্যা বা নিদ্রাহীনতার দোষ দেয় এবং হার্ট অ্যাটাকের সঙ্গে একে সম্পর্কিত মনে করেন না। কিন্তু বিশেষ করে যদি হঠাৎ করে দৈনন্দিন শক্তি হ্রাস পায় এবং বিশ্রামের পরেও ক্লান্তি না কমে, তবে তা অবশ্যই সতর্ক সংকেত হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। তাই অস্বাভাবিক অবসাদ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া বা হাঁপানি

নারীদের হার্ট অ্যাটাকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ও মাঝেমধ্যে অদ্ভুত উপসর্গ হলো শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া বা হঠাৎ হাঁপানি অনুভব করা। এটি হৃদপিণ্ডের রক্তপাম্পিং ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার কারণে হয়, ফলে ফুসফুসে তরল জমতে শুরু করে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়। হাঁটাচলা বা সামান্য পরিশ্রমের পরেই যদি অস্বাভাবিক শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, তবে সেটিকে সহজভাবে ফেলে দেওয়া উচিত নয়।

অনেক নারীই ভেবে নেন এটি হাঁপানির সমস্যা বা ফুসফুসজনিত অসুবিধা, অথচ প্রকৃতপক্ষে এটি হৃদপিণ্ডের ব্যর্থতার প্রাথমিক ইঙ্গিত হতে পারে। যদি বিশ্রামেও শ্বাস নিতে কষ্ট হয় অথবা শোওয়ার সময় শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়, তাহলে তা বিশেষভাবে চিন্তার বিষয়। এই লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে প্রয়োজনীয় ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম (ECG) বা অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে হার্টের অবস্থা যাচাই করা উচিত।

ঘাড়, চোয়াল ও পিঠে ব্যথা

পুরুষদের তুলনায় নারীদের হার্ট অ্যাটাকের সময় বুকের ব্যথা কম স্পষ্ট হতে পারে, বরং অনেক নারীর ক্ষেত্রে ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে ঘাড়, চোয়াল বা পিঠের দিকে। এই ব্যথাগুলো সাধারণত অস্পষ্ট, টানটান বা চাপের মতো অনুভূত হয় এবং প্রায়ই এটি হালকা হতে পারে, ফলে তা অন্যান্য সাধারণ ব্যথার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হয়। অনেক নারীই মনে করেন এটি হয়তো ঘাড়ের স্ট্রেন, দাঁতের সমস্যা বা পিঠের টান।

কিন্তু যখন ঘাড় বা চোয়ালে ব্যথা অস্বাভাবিকভাবে শুরু হয় এবং বিশেষ করে ব্যথার সঙ্গে ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট বা ঠান্ডা ঘামের মতো অন্য কোনো উপসর্গ যুক্ত হয়, তখন সেটিকে অবহেলা করা বিপজ্জনক। পিঠে যদি ব্যথা চাপ অনুভূতির মতো হয় এবং বিশ্রামে বা ওষুধে না কমে, তবে তা হৃদপিণ্ডের সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

হালকা মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া

মেয়েদের হার্ট অ্যাটাকের সময় আরেকটি অদ্ভুত উপসর্গ হলো হালকা মাথা ঘোরা বা হঠাৎ দুর্বল হয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। যখন হৃদপিণ্ড পর্যাপ্ত রক্ত পাম্প করতে পারে না, তখন মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ কমে যায় এবং মাথা ঘোরার অনুভূতি বা সাময়িক ব্ল্যাক আউট হতে পারে। বিশেষ করে যদি দ্রুত উঠে দাঁড়ানোর সময় মাথা ঘোরে বা দৃষ্টিভ্রম হয়, তবে এটি হৃদরোগের লুকানো ইঙ্গিত হতে পারে।

অনেক নারী মাথা ঘোরাকে সাধারণ ক্লান্তি বা ডিহাইড্রেশনের ফল বলে ভাবেন। কিন্তু যদি এর সঙ্গে বুকের চাপ, শ্বাসকষ্ট বা ঘাম যুক্ত থাকে, তাহলে এটি অবশ্যই একটি সম্ভাব্য কার্ডিয়াক ইমার্জেন্সি। মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হওয়ার ঘটনা অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ এটি হৃদপিণ্ডের মারাত্মক সমস্যা নির্দেশ করতে পারে।

ঠাণ্ডা ঘাম ও বমি ভাব

মেয়েদের হার্ট অ্যাটাকের সময় হঠাৎ ঠাণ্ডা ঘাম হওয়া –  বিশেষ করে কোনো শারীরিক পরিশ্রম ছাড়াই –  একটি গুরুতর সংকেত। এটি শরীরের স্ট্রেস প্রতিক্রিয়ার ফলাফল, যখন হৃদপিণ্ড রক্ত চলাচলে ব্যর্থ হয় এবং শরীর বিপদের সংকেত দিতে থাকে। ঠান্ডা ঘাম সাধারণত শরীর ভিজিয়ে দেয় এবং রোগী অস্বস্তিকর ঠান্ডা অনুভব করতে পারেন, যা হার্ট অ্যাটাকের সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।

এর পাশাপাশি বমি ভাব বা হালকা পেটের অস্বস্তিও নারীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের সময় দেখা দিতে পারে। অনেকে মনে করেন এটি হয়তো গ্যাস্ট্রিক, এসিডিটি বা খাবারজনিত সমস্যা, ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে ভুল চিকিৎসা হয়। কিন্তু যদি বমি ভাবের সঙ্গে বুকের চাপ, ঘাম, দুর্বলতা বা শ্বাসকষ্ট যুক্ত থাকে, তাহলে অবিলম্বে হার্টের সমস্যা হিসেবে একে বিবেচনা করা উচিত এবং জরুরি চিকিৎসা নিতে হবে।

কেন নারীদের হার্টের সমস্যা ধরা পড়ে দেরিতে?

নারীদের হার্টের সমস্যা ধরা পড়তে দেরি হয় মূলত তাদের উপসর্গগুলোর ভিন্নতা ও অস্পষ্টতার কারণে। পুরুষদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক সাধারণত ক্লাসিক্যাল বুক ব্যথা, চাপ বা বাঁ হাতের ব্যথার মতো পরিচিত লক্ষণ দিয়ে প্রকাশ পায়, যা দ্রুত সবাই চিনতে পারে। কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো অনেক সময় অপ্রচলিত বা সূক্ষ্ম হয় –  যেমন অতিরিক্ত ক্লান্তি, হালকা শ্বাসকষ্ট, ঘাড় বা চোয়ালে অস্বস্তি, ঠান্ডা ঘাম বা হালকা মাথা ঘোরা। এসব উপসর্গ সাধারণত দৈনন্দিন চাপ, গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বা মানসিক দুর্বলতার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়, ফলে নারী নিজেও গুরুত্ব দেন না এবং চিকিৎসকও প্রাথমিক পর্যায়ে হৃদরোগের সন্দেহ না করে অন্য রোগের দিকে মনোযোগ দেন।

এছাড়া সামাজিক ও মানসিক দিক থেকেও নারীরা প্রায়ই নিজেদের শারীরিক সমস্যা অবহেলা করে থাকেন। তারা পরিবারের দায়িত্ব, কাজের চাপ বা বাচ্চাদের যত্ন নেওয়ার মধ্যে নিজেদের স্বাস্থ্যের পরিবর্তনকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে ধৈর্য ধরেন বা পরে সময় বের করার কথা ভাবেন। অনেক সময় আবার নারীদের হরমোনজনিত কারণেও লক্ষণগুলো চাপা পড়ে যেতে পারে –  যেমন মেনোপজ-পূর্ব সময়ে ইস্ট্রোজেন কিছুটা হার্টের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। এই সব কারণ মিলিয়ে নারীদের মধ্যে হার্টের সমস্যা প্রায়ই ধরা পড়ে দেরিতে, যখন তা অনেকটাই জটিল আকার ধারণ করে ফেলে। তাই নারীদের নিজেদের শরীরের অল্প পরিবর্তনকেও গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত পরীক্ষা ও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

কখন সাথে সাথে চিকিৎসকের কাছে যাবেন?

মেয়েদের ক্ষেত্রে হার্টের সমস্যা অনেক সময় সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যার মতো মনে হয় –  যেমন গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা, ক্লান্তি, বা হালকা বমি ভাব। কিন্তু যদি কোনো নারীর হঠাৎ করে প্রচণ্ড ক্লান্তি আসে, বুকের মাঝখান বা বাঁ পাশে চাপ বা অস্বস্তি অনুভূত হয়, শ্বাস নিতে কষ্ট হয় বা ঘাড়, চোয়াল, পিঠ কিংবা বাম হাতের দিকে ব্যথা ছড়িয়ে যায়, তাহলে এটি কোনোভাবেই অবহেলা করা উচিত নয়। বিশেষ করে যদি ব্যথা বিশ্রাম নিলেও না কমে বা সময়ের সাথে বেড়ে যায়, তাহলে সাথে সাথে নিকটস্থ হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। অনেক নারীর ক্ষেত্রে ঠাণ্ডা ঘাম হওয়া, মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়াও হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হতে পারে। তাই, এসব উপসর্গ দেখা দিলেই এক মুহূর্ত দেরি না করে চিকিৎসা নিতে হবে। দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া মানেই জীবন রক্ষার সম্ভাবনা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

এছাড়া, যদি মনে হয় হঠাৎ করে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে –  যেমন হাঁটার সময় সহজেই দম বন্ধ হয়ে আসা, অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়া, হালকা ব্যথার সঙ্গে বমি বা বুকে চাপ অনুভূত হওয়া –  তাহলে এটিও হার্টের সমস্যার সংকেত হতে পারে। অনেক সময় নারীরা মনে করেন এসব ছোটখাটো সমস্যা সময়ের সাথে ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু সত্য হলো, হার্টের রোগ সময় নষ্ট করার সুযোগ দেয় না। বিশেষ করে যাদের আগে থেকে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা পারিবারিকভাবে হার্টের অসুস্থতার ইতিহাস আছে, তাদের জন্য ঝুঁকি আরও বেশি। তাই নিজের শরীরের প্রতি যত্নবান হওয়া, অল্প কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তনকেও গুরুত্ব দেয়া এবং প্রয়োজনে সাথে সাথে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।

উপসংহার

মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো আজকের দিনে সময়ের চরম দাবি। হার্টের সমস্যা সবসময় প্রচলিত লক্ষণ দিয়ে আসে না- বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে। তাই, নিজের শরীরের অস্বাভাবিক পরিবর্তনগুলিকে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। মনে রাখতে হবে, সচেতনতা এবং সময়মতো চিকিৎসা একসাথে চললে হার্টের মতো নীরব ঘাতককেও পরাজিত করা সম্ভব। নিজের জীবনকে ভালোবাসুন এবং অন্যদেরও এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানাতে এগিয়ে আসুন।

Related posts

Leave a Comment