হার্ট অ্যাটাক আর হার্ট ফেইল এর মধ্যে পার্থক্য কী? 

হার্ট অ্যাটাক আর হার্ট ফেইল

এক ভোরবেলা হঠাৎ বুকে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে মাঝবয়সী আব্দুর সাত্তার মিয়া হাসপাতালে ভর্তি হন। ডাক্তাররা জানান, তিনি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছেন। পরদিন একই হাসপাতালে আরেকজন বৃদ্ধ ভর্তি হলেন, যার দেহ ফুলে গেছে, হাঁপাচ্ছেন, চলাফেরা করতে পারছেন না। এবার ডাক্তার বললেন, এটা হার্ট ফেইল। শুনতে প্রায় একরকম মনে হলেও, এই দুইটা রোগ একেবারেই ভিন্ন –  জীবনহানির ধরন, কারণ ও চিকিৎসাও আলাদা। অথচ বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১ লক্ষ মানুষ হার্ট অ্যাটাক ও হার্ট ফেইল-এর জটিলতায় প্রাণ হারায়, যার মধ্যে বেশিরভাগই এই পার্থক্য জানেন না!

হার্ট অ্যাটাক আর হার্ট ফেইল শব্দ দুটো আমরা প্রায়শই একসাথে শুনি, কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ এগুলোকে গুলিয়ে ফেলেন। হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে হঠাৎ করেই হার্টে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়া, যেখানে সময়মতো চিকিৎসা না পেলে মৃত্যু অনিবার্য। অন্যদিকে, হার্ট ফেইল হলো হৃদপিণ্ডের ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়া, যার ফলে শরীরে প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহ করতে না পারা –  এটি দীর্ঘমেয়াদী একটি অবস্থা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে প্রতি ৩ জন মৃত্যুর মধ্যে ১ জনের কারণ হচ্ছে হার্ট ডিজিজ, যার একটি বড় অংশ আসে এই দুটি রোগ থেকেই।

হার্ট অ্যাটাক কী? কেন এবং কখন ঘটে?

হার্ট অ্যাটাক একটি গুরুতর শারীরিক অবস্থা, যেখানে হার্টের একটি অংশে রক্তপ্রবাহ হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়, ফলে সেই অংশটি অক্সিজেনের অভাবে নষ্ট হতে শুরু করে। আমাদের হার্ট প্রতিনিয়ত শরীরের প্রতিটি কোষে রক্ত পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে, আর সেই কাজটি করতে হলে নিজেও রক্ত ও অক্সিজেন পেতে হয়। হার্টের জন্য নির্ধারিত রক্তনালীকে বলা হয় করোনারি আর্টারি। যখন এই আর্টারিতে কোনো ধরনের ব্লকেজ (জমাট কোলেস্টেরল বা রক্তের থকথকে পদার্থের কারণে) সৃষ্টি হয়, তখন সেখানে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং তাৎক্ষণিকভাবে হার্টের কোষগুলো অক্সিজেনের অভাবে মারা যেতে থাকে। এই পরিস্থিতিকেই হার্ট অ্যাটাক বলা হয়। চিকিৎসা না করলে এই কোষমৃত্যু ছড়িয়ে পড়ে এবং মানুষ মারা যেতে পারে।

হার্ট অ্যাটাকের মূল কারণ হলো করোনারি আর্টারিতে ব্লকেজ তৈরি হওয়া, যা সাধারণত হয় অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস নামক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এই অবস্থায় রক্তনালীর ভেতরে ধীরে ধীরে ফ্যাটি উপাদান (বিশেষ করে কোলেস্টেরল), ক্যালসিয়াম ও বর্জ্য জমে একটি শক্ত স্তর তৈরি করে যাকে বলে প্ল্যাক। এই প্ল্যাক বড় হতে হতে একসময় ফেটে যেতে পারে, তখন শরীরের রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া সেখানে কাজ করে এবং রক্তপ্লেটলেটগুলো একত্রিত হয়ে জমাট বাঁধে। এই জমাট বাধা হয়ে পুরো আর্টারির রক্তপ্রবাহ বন্ধ করে দিতে পারে। এছাড়াও ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, অলস জীবনযাপন এবং অপরিমিত ফাস্টফুড গ্রহণ- এই সবকিছু হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়ায়।

হার্ট অ্যাটাক হঠাৎ করেই ঘটতে পারে, তবে কিছু নির্দিষ্ট সময় ও পরিস্থিতিতে এর ঝুঁকি বেশি থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ভোর বেলায় শরীরে কিছু হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় যা রক্তচাপ এবং হার্টরেট বাড়িয়ে দেয়, এবং এই সময় অনেকেরই প্রথম হার্ট অ্যাটাক ঘটে। একইভাবে, যারা হঠাৎ করে তীব্র ব্যায়াম করেন বা ভারি জিনিস তোলেন, তাদের ক্ষেত্রে ব্লকেজ ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা ভয়, রাগ, শোকের মুহূর্তেও শরীরে অ্যাড্রিনালিন হরমোন বেড়ে গিয়ে রক্তনালীতে সংকোচন বা রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। এমনকি অতিরিক্ত ঠান্ডা আবহাওয়াও রক্তনালী সংকুচিত করে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের এসব পরিস্থিতিতে বিশেষভাবে সতর্ক থাকা জরুরি।

হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করার জন্য আগে থেকে সতর্ক থাকা জরুরি। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কম চর্বিযুক্ত স্বাস্থ্যকর খাবার রাখা, নিয়মিত ব্যায়াম করা, ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা, এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার। হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক লক্ষণ যেমন বুকের মাঝখানে চাপ অনুভব, হাত বা চোয়ালে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, হঠাৎ ঘাম হওয়া, মাথা ঘোরা ইত্যাদি দেখা দিলে এক মুহূর্ত দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে বা নিকটস্থ হাসপাতাল পৌঁছাতে হবে। হার্ট অ্যাটাকের সময় কয়েক মিনিট দেরি করাও জীবন-মরণের ব্যবধান তৈরি করতে পারে।

হার্ট ফেইল কী, কেন এবং কখন হয়?

হার্ট ফেইল (Heart Failure) হলো এমন একটি জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অবস্থা, যেখানে হার্ট তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং শরীরের চাহিদা অনুযায়ী যথেষ্ট রক্ত পাম্প করতে পারে না। এটি “ফেইল” শব্দটির অর্থ অনুযায়ী হঠাৎ কাজ বন্ধ করে দেওয়া নয়, বরং ধীরে ধীরে হার্ট দুর্বল হয়ে পড়ে এবং কাজের দক্ষতা কমে যায়। হার্ট ফেইল সাধারণত দুইভাবে হতে পারে- একটি হলো হার্ট ঠিকভাবে রক্ত পাম্প করতে পারছে না (Systolic failure), আরেকটি হলো হার্টে রক্ত ঠিকভাবে ভর্তি হচ্ছে না বা হার্ট শক্ত হয়ে গেছে (Diastolic failure)। এই অবস্থায় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন ফুসফুস, কিডনি বা মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত রক্ত ও অক্সিজেন না পেয়ে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তিভাব, পায়ে পানি জমা, হঠাৎ ওজন বৃদ্ধি, বুক ধড়ফড় করা ও রাতের বেলায় শ্বাসকষ্ট হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়।

ধীরে ধীরে হার্ট দুর্বল হওয়া এক সময় এমন পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে যেখানে মানুষের দৈনন্দিন জীবন পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। শুরুতে সাধারণ হাঁটাচলা বা সিঁড়ি ভাঙার সময় একটু শ্বাসকষ্ট হতে পারে, কিন্তু পরে এমন অবস্থাও হতে পারে যে বিছানা থেকে উঠতেই কষ্ট হয়। ফুসফুসে পানি জমে যাওয়া (pulmonary edema), কিডনি ফেইলিওর, যকৃতের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া- এসবই একে একে শুরু হয়। এমনকি ঘন ঘন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয় এবং জীবনমান মারাত্মকভাবে কমে যায়। যারা এই অবস্থায় চিকিৎসা নেন না বা জীবনযাপন পরিবর্তন করেন না, তাদের ক্ষেত্রে জীবনের ঝুঁকি প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকে। হার্ট ফেইল কোনো এককালীন রোগ নয়, এটি ধীরে ধীরে বাড়ে এবং উপসর্গ শুরু হওয়ার অনেক আগেই ভিতরে ভিতরে হার্ট দুর্বল হতে থাকে। তাই উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, করোনারি আর্টারি ডিজিজ বা আগে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে এমন ব্যক্তিদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে এবং হার্ট ফেইলের পূর্বাভাস পেলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।

হার্ট অ্যাটাক আর হার্ট ফেইল

হার্ট অ্যাটাক আর হার্ট ফেইল- দুটিই হার্ট-সংক্রান্ত গুরুতর সমস্যা হলেও এদের প্রকৃতি, কারণ, উপসর্গ এবং চিকিৎসার ধরনে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। হার্ট অ্যাটাক হলো হঠাৎ করে হার্টের কোনো অংশে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া, যার ফলে সেই অংশের কোষ অক্সিজেনের অভাবে মারা যেতে শুরু করে। এটি একটি তাৎক্ষণিক ও আকস্মিক জরুরি অবস্থা। অন্যদিকে, হার্ট ফেইল হলো একটি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা দীর্ঘমেয়াদি অবস্থা, যেখানে হার্ট তার পাম্পিং ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী রক্ত সরবরাহ করতে পারে না। হার্ট অ্যাটাকের কারণ প্রধানত করোনারি আর্টারির ব্লকেজ, আর হার্ট ফেইলের পেছনে কারণ হতে পারে উচ্চ রক্তচাপ, আগের হার্ট অ্যাটাকের ক্ষতি, বা কার্ডিওমায়োপ্যাথি। অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের পরপরই হার্ট ফেইলের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই দুটো সমস্যার পার্থক্য জানা এবং সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া জীবন বাঁচাতে পারে।

মূল পার্থক্যগুলো এক নজরে

বিষয়হার্ট অ্যাটাকহার্ট ফেইল
সংজ্ঞাহার্টের কোনো অংশে রক্তপ্রবাহ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়াহার্টের পাম্পিং ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যাওয়া
প্রকৃতিতাৎক্ষণিক ও আকস্মিক জরুরি অবস্থাদীর্ঘমেয়াদি ও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা সমস্যা
মূল কারণকরোনারি আর্টারিতে ব্লকেজ ও রক্ত জমাটউচ্চ রক্তচাপ, আগের হার্ট অ্যাটাক, দুর্বল হার্ট পেশি
উপসর্গবুক ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ঘাম, বমি বমি ভাবক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট, পায়ে পানি, ফুসফুসে পানি
চিকিৎসার ধরনজরুরি চিকিৎসা ও হাসপাতালে ভর্তিদীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা ও জীবনধারা পরিবর্তন
ঝুঁকিহঠাৎ মৃত্যু ঘটতে পারেজীবনমানের অবনতি, বারবার হাসপাতালে ভর্তি

আচমকা বনাম দীর্ঘমেয়াদি: কোনটি বেশি বিপজ্জনক?

আচমকা ঘটে যাওয়া হার্ট অ্যাটাক অনেক সময় কোনো রকম পূর্বাভাস ছাড়াই একজন সুস্থ ব্যক্তিকেও আক্রান্ত করতে পারে, এবং যদি সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা না নেওয়া হয়, তবে এটি মুহূর্তের মধ্যে জীবন কেড়ে নিতে পারে। হার্টে রক্ত সরবরাহকারী করোনারি আর্টারি হঠাৎ করে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে গেলে হার্টের কোষগুলো অক্সিজেনের অভাবে মরতে শুরু করে, যা একটি মারাত্মক শারীরিক বিপর্যয় তৈরি করে। উপসর্গ যেমন বুক চেপে ধরা ব্যথা, ঘাম, শ্বাসকষ্ট, এবং হাত বা চোয়ালে ব্যথা খুব দ্রুত দেখা দেয় এবং প্রায়ই রোগী বুঝে ওঠার আগেই জ্ঞান হারাতে পারেন। অনেক সময়, বিশেষ করে যদি আশেপাশে কেউ না থাকে, হার্ট অ্যাটাকের ফলে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে মৃত্যু ঘটে যেতে পারে। তাই আচমকা হার্ট অ্যাটাক হলো জীবন ও মৃত্যুর মাঝখানে একমাত্র সময়ের লড়াই, যেখানে মিনিটে-মিনিটে সিদ্ধান্ত ও চিকিৎসা নির্ধারণ করে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা।

অন্যদিকে, হার্ট ফেইল আচমকা প্রাণ কেড়ে নিলেও তা সাধারণত দীর্ঘ সময় ধরে শরীরকে নিঃশেষ করে দেয়। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে হার্ট দিনের পর দিন দুর্বল হতে থাকে, এবং শরীরের প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহ করতে না পারায় ফুসফুসে পানি জমা, কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট হওয়া, পায়ে পানি, হঠাৎ ওজন বৃদ্ধি ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। অনেক সময় রোগীরা ভাবেন এটা বয়সজনিত দুর্বলতা বা সাধারণ ক্লান্তি, কিন্তু ভেতরে ভেতরে হার্ট ক্রমশ ব্যর্থতার দিকে এগিয়ে যায়। যদিও এটি আচমকা নয়, তবুও চিকিৎসা না নিলে এক পর্যায়ে শ্বাস নেওয়াই কঠিন হয়ে পড়ে এবং জীবনমান একেবারে তলানিতে নেমে যায়। ফলে হার্ট ফেইল দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক, মানসিক এবং আর্থিকভাবে ভেঙে ফেলার এক ভয়ঙ্কর প্রক্রিয়া, যা ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ না করলে মৃত্যুও অনিবার্য।

হার্ট অ্যাটাক এবং হার্ট ফেইল প্রতিরোধে করণীয়

হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করার মূল চাবিকাঠি হলো- লাইফস্টাইল পরিবর্তন এবং ঝুঁকির কারণগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা। প্রথমত, খাবারে পরিবর্তন আনতে হবে: উচ্চ চর্বিযুক্ত, লবণ ও চিনিযুক্ত খাবার কমিয়ে দিয়ে সবজি, ফল, পূর্ণ শস্য, ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ধূমপান সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে এবং অ্যালকোহল গ্রহণ, যদি থেকে থাকে, তা সীমিত করতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিস- এই তিনটি প্রধান ঝুঁকি যদি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তাহলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। এ ছাড়া প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হালকা থেকে মাঝারি শারীরিক ব্যায়াম (যেমন হাঁটা, সাইকেল চালানো, সাঁতার) করাকে অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। মানসিক চাপও একটি বড় কারণ- তাই পর্যাপ্ত ঘুম, মেডিটেশন বা সময়মতো বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। পরিবারে যদি কারও আগে হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে, তাহলে নিয়মিত হেলথ চেকআপ করিয়ে ঝুঁকি মূল্যায়ন করা উচিত।

হার্ট ফেইল প্রতিরোধে লক্ষ্য রাখতে হবে হার্ট যেন ধীরে ধীরে দুর্বল না হয়ে পড়ে। এজন্য উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো দীর্ঘমেয়াদে হার্টের পেশিকে দুর্বল করে দিতে পারে। হার্ট ফেইলের আরেকটি বড় কারণ হলো পূর্ববর্তী হার্ট অ্যাটাক, তাই যারা একবার অ্যাটাকের শিকার হয়েছেন, তাদের প্রতিদিন ওষুধ সঠিকভাবে গ্রহণ, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং নির্ধারিত খাদ্য ও ব্যায়াম রুটিন মেনে চলা বাধ্যতামূলক। অতিরিক্ত ওজন হার্টের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে, তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। শরীর ফুলে যাওয়া, হাঁটলে শ্বাসকষ্ট হওয়া বা রাতে ঘুমানোর সময় শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া- এই উপসর্গগুলো অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। হার্ট ফেইল প্রতিরোধ মানে শুধুই বাঁচা নয়, বরং একটি স্বাস্থ্যকর ও কর্মক্ষম জীবন ধরে রাখা, যেখানে সতর্কতাই হতে পারে সবচেয়ে কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধ ব্যবস্থা।

উপসংহার

সবচেয়ে ভয়ংকর দিক হলো, হার্ট অ্যাটাক আর হার্ট ফেইল –  উভয়ই নীরব ঘাতক। আমাদের অনেকেই এই রোগগুলোর প্রাথমিক লক্ষণ, ঝুঁকিপূর্ণ অভ্যাস বা প্রতিরোধ পদ্ধতি সম্পর্কে জানি না। অথচ সচেতনতা বাড়ালে ও জীবনধারায় সামান্য পরিবর্তন আনলে এই রোগ দুটির ভয়াবহতা অনেকটাই কমানো সম্ভব। তাই সময় এসেছে সচেতন হওয়ার, হার্টের সুস্থতা নিয়ে ভাবার এবং সবচেয়ে বড় কথা, হার্ট অ্যাটাক আর হার্ট ফেইল এর পার্থক্যটা স্পষ্টভাবে বোঝার। কারণ ভুল বোঝা মানেই হতে পারে ভুল চিকিৎসা-  আর ভুল চিকিৎসা মানেই জীবন হারানোর ঝুঁকি।

Related posts

Leave a Comment