রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে বা শুয়ে থাকার সময় কখনও কি আপনি হঠাৎ বুকের মাঝে চাপ অনুভব করেছেন? আপনি হয়তো ভেবেছিলেন, এটি শুধু সাধারণ ক্লান্তি বা শরীরিক অবস্থা, কিন্তু এটিই হতে পারে মরণব্যধি হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ । আপনি জেনে অবাক হবেন যে, বিশ্বব্যাপী হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা ভয়াবহ হারে বাড়ছে এবং এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচার জন্য একমাত্র হাতিয়ার হলো সচেতনতা বৃদ্ধি করা। ২০২০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ১৭.৯ মিলিয়ন মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়, যা সারা বিশ্বে মৃত্যুর মূল কারণগুলির মধ্যে অন্যতম।
তাই হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ চিহ্নিত করা এবং দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আমরা হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ গুলো নিয়ে বিস্তারিতভাবে জানার চেষ্টা করবো। এছাড়াও কোন লক্ষণ দেখা দিলে আপনি কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন, সে সম্পর্কেও জানবো। তাই ভালোভাবে বুঝতে হলে আজকের লেখাটি অবশ্যই শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ কি কি?
বুকের ব্যথা বা অস্বস্তি
হৃদরোগের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলো বুকের ব্যথা বা অস্বস্তি। এটি সাধারণত বুকের মাঝখানে বা বাম পাশে অনুভূত হয়। এই ব্যথা কখনও তীব্র বা চাপের মতো অনুভূত হতে পারে, আবার কখনও চাপ বা ভারী অনুভূতির মতোও হতে পারে। বুকের ব্যথা হৃদযন্ত্রের অক্সিজেনের অভাবের কারণে হয়ে থাকে এবং এটি হৃদরোগের সংকেত হতে পারে। যদি বুকের ব্যথা দীর্ঘসময় ধরে চলতে থাকে বা এর সাথে অন্যান্য লক্ষণ যেমন শ্বাসকষ্ট, বমি বা ঘামানোর সমস্যা যুক্ত থাকে, তবে তা অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার জন্য সংকেত হতে পারে।
এছাড়াও, অনেক সময় বুকের ব্যথা বা অস্বস্তি নিছক এক স্থানেই সীমাবদ্ধ থাকে না, এটি কাঁধ, বাহু, ঘাড়, পেট বা চোয়ালে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে, এই ব্যথা বা অস্বস্তি শারীরিক পরিশ্রম বা মানসিক চাপের পরেও বেড়ে যেতে পারে। এই ধরনের ব্যথা মৃদু হতে পারে এবং সাধারণ কিছু ব্যথা হিসেবে ভুল বোঝা যেতে পারে, কিন্তু যদি এটি অনেক বেশি তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে তা হৃদরোগের প্রাথমিক সংকেত হতে পারে।
শ্বাসকষ্ট বা নিঃশ্বাসের সমস্যা
শ্বাসকষ্ট বা নিঃশ্বাসের সমস্যা হৃদরোগের আরেকটি সাধারণ লক্ষণ। এই লক্ষণটি সাধারণত যখন হৃদযন্ত্র তার কাজ করতে ব্যর্থ হয়, তখন দেখা দেয়। হৃদপিণ্ড যখন ঠিকভাবে রক্ত পাম্প করতে পারে না, তখন শরীরের অন্যান্য অংশে অক্সিজেনের অভাব হতে থাকে, যার ফলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয়। শ্বাসকষ্টের সাথে কখনও কখনও বুকে চাপ অনুভূতি এবং পা বা পায়ে ফোলা থাকতে পারে।
শ্বাসকষ্টের সমস্যা হৃদরোগের পাশাপাশি ফুসফুসের রোগ থেকেও হতে পারে, তবে যদি এটি অব্যাহত থাকে এবং পরবর্তী সময়ে অন্যান্য হৃদরোগের লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন বুকের ব্যথা বা অস্বস্তি, তাহলে এটি অবশ্যই হৃদরোগের একটি লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এই ধরনের শ্বাসকষ্টের সমস্যায় অনেক সময় শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করার পর বাড়তি চাপ অনুভূত হয় এবং বিশেষ করে রাতে শোয়ার সময় শ্বাসকষ্ট আরো তীব্র হতে পারে। এটি একে ‘পারক্সিজমাল নোকটার্নাল ডিসপনিয়া’ (PND) বলে পরিচিত।
পেশিতে দুর্বলতা বা অবসাদ
হৃদরোগের একটি সাধারণ লক্ষণ হলো পেশিতে দুর্বলতা বা অবসাদ অনুভব করা। শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোকে যথাযথ অক্সিজেন এবং পুষ্টি পৌঁছানোর জন্য হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা প্রয়োজন। কিন্তু যখন হৃদযন্ত্র যথাযথভাবে কাজ করতে অক্ষম হয়, তখন শরীরের অন্যান্য অংশে শক্তির অভাব হতে থাকে। এর ফলে, মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্মে অভ্যস্ত হতে সমস্যা সৃষ্টি হয়, এমনকি ছোটখাটো কাজও করতে অসুবিধা হয়। এর ফলে দুর্বলতা, ক্লান্তি এবং অবসাদ দেখা দেয়, যা হৃদরোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
এছাড়াও, যদি আপনি শারীরিক কাজকর্ম বা ব্যায়াম করতে গিয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়েন বা দীর্ঘ সময় ধরে থেমে গিয়ে বিশ্রাম নিতে হয়, তবে এটি হৃদরোগের লক্ষণ হতে পারে। এই ধরনের অবসাদ সাধারণত বিশ্রামের পরও সহজে কমে না এবং এটি একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই, যদি এটি নিয়মিত হয় এবং অন্যান্য লক্ষণের সাথে মিল থাকে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
মাথা ঘোরা বা অসুস্থ অনুভূতি
হৃদরোগের আরেকটি প্রাথমিক লক্ষণ হলো মাথা ঘোরা বা অসুস্থ অনুভূতি। এটি সাধারণত তখন ঘটে যখন হৃদযন্ত্র সঠিকভাবে রক্ত পাম্প করতে পারে না এবং ফলস্বরূপ মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাব ঘটে। মাথা ঘোরা, ভারসাম্যহীনতা এবং অস্থিরতার অনুভূতি হৃদরোগের লক্ষণ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, বিশেষ করে যদি এটি দ্রুত হয়ে থাকে বা স্বাভাবিক অবস্থায় অস্বস্তির কারণ হয়ে থাকে।

মাথা ঘোরা বা অসুস্থ অনুভূতি সাধারণত হালকা থেকে মাঝারি হতে পারে, তবে যদি এটি তীব্র হয় এবং অন্যান্য হৃদরোগের লক্ষণ যেমন বুকের ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট সঙ্গে থাকে, তবে এটি জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নেয়ার জন্য একটি সংকেত হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী মাথা ঘোরা বা ভারসাম্যহীনতা হৃদরোগের পাশাপাশি অন্যান্য গুরুতর সমস্যা নির্দেশ করতে পারে, যেমন স্ট্রোক বা উচ্চ রক্তচাপ।
ঘাম বা ঠান্ডা ঘাম হওয়া
হৃদরোগের সময় এক আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো ঠান্ডা ঘাম হওয়া, বিশেষত যখন এটি বুকের ব্যথা বা শ্বাসকষ্টের সাথে যুক্ত থাকে। সাধারণত, যখন শরীরের অক্সিজেনের অভাব হয় বা হৃদযন্ত্র ঠিকভাবে রক্ত পাম্প করতে পারে না, তখন অটো-নির্বাচিত স্নায়ু সিস্টেমের মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে অসুবিধা হতে পারে, যা ঠান্ডা ঘামের কারণ হতে পারে। এই ঘাম সাধারণত ত্বকে শীতল এবং ঠান্ডা অনুভূত হয় এবং এর সাথে কখনো কখনো মাথা ঘোরা বা দুর্বলতা দেখা যেতে পারে।
হৃদরোগের কারণে ঠান্ডা ঘাম হওয়া অন্য এক গুরুতর পরিস্থিতি হতে পারে, যেখানে শরীর প্রচন্ড চাপের মধ্যে থাকে এবং এটি শরীরের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ঘাম উৎপন্ন করে। বিশেষ করে, বুকের ব্যথা বা শ্বাসকষ্টের সাথে যখন এটি ঘটতে থাকে, তখন এটি গুরুতর হৃদরোগের সংকেত হতে পারে। যদি এমন ঘাম অত্যন্ত তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং এতে সঙ্গে অন্য লক্ষণ যেমন বমি, ক্লান্তি, বা বুকে চাপ অনুভূতি থাকে, তবে তা চিকিৎসার জন্য দ্রুত হাসপাতালে যাওয়ার নির্দেশিকা হতে পারে।
বমি বা বমির অনুভূতি
হৃদরোগের অন্যতম অপ্রত্যাশিত লক্ষণ হলো বমি বা বমির অনুভূতি। অনেক সময়, হৃদযন্ত্রের অস্বাভাবিক কার্যকলাপ বা অক্সিজেনের অভাবে শরীরের বিভিন্ন অংশে গোলমাল সৃষ্টি হয়, যার কারণে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বা বমি হতে পারে। বিশেষত, হার্ট অ্যাটাকের সময়, বুকের ব্যথা বা অস্বস্তির সাথে বমির অনুভূতি উপস্থিত থাকতে পারে, যা প্রাথমিকভাবে একজন ব্যক্তির জন্য বিভ্রান্তিকর হতে পারে। অনেক সময় মানুষ মনে করে যে, শুধু পেটের সমস্যার কারণে বমি হচ্ছে, কিন্তু এটি হৃদরোগের সঙ্গেও সম্পর্কিত হতে পারে।
এছাড়াও, উচ্চ রক্তচাপ বা হার্ট ফেইলিওরের কারণে পেটের সাথে সম্পর্কিত উপসর্গও বেড়ে যেতে পারে। এই ধরনের বমি বা বমির অনুভূতি সাধারণত সাথে সাথে খাবার বা পানীয়ের প্রতি অরুচি তৈরি করে এবং এতে অতিরিক্ত অসুস্থতার অনুভূতি দেখা দেয়। যদি এটি বুকের ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বা ঠান্ডা ঘামের সাথে যুক্ত থাকে, তবে তা গুরুতর হৃদরোগের চিহ্ন হতে পারে এবং দ্রুত চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া উচিত।
হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে?
হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে প্রতিটি মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, কারণ দ্রুত পদক্ষেপ নিলে জীবন বাঁচানোর সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। আপনি যদি বুকের ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, অতিরিক্ত ঘাম, বা অস্বাভাবিক ক্লান্তি অনুভব করেন, তবে দ্রুত কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এখানে কী কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে, তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।
প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বিশ্রাম অত্যন্ত জরুরি
হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে সবচেয়ে প্রথমে আপনার শরীরকে বিশ্রাম দিতে হবে। যদি আপনি বুকের ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন, তবে তাৎক্ষণিকভাবে শারীরিক কার্যকলাপ বন্ধ করুন। দ্রুত বসে বা শুয়ে পড়ুন এবং স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নেয়ার চেষ্টা করুন। কিছুক্ষণের জন্য শুয়ে থাকলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন আরও ভালোভাবে কাজ করবে এবং হৃদপিণ্ডের উপর চাপ কমবে। এ সময় আপনার পায়ের নিচে একটি তলদেশ বা বালিশ দিয়ে উঁচু অবস্থান রাখলে আপনার শরীরের অবস্থান আরও সঠিক হতে পারে এবং রক্ত সঞ্চালন সহজ হবে। এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ শারীরিক উত্তেজনা হৃদরোগের লক্ষণগুলোর তীব্রতা বাড়াতে পারে।
এসপিরিন খাওয়া
হৃদরোগের লক্ষণ দেখা দিলে এএসপিরিন খাওয়া একটা জরুরি পদক্ষেপ হতে পারে, কারণ এটি রক্ত পাতলা করার কাজ করে এবং রক্ত চলাচলকে সহজ করে। যদি আপনার কাছে এএসপিরিন থাকে এবং আপনার বুকের ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট অনুভব হয়, তবে এটি সেবন করা যেতে পারে। তবে, এএসপিরিন নেয়ার আগে নিশ্চিত করুন যে আপনি কোনো রক্ত সঞ্চালন সমস্যা, আলার্জি বা গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় ভুগছেন না। যদি আপনি কোনো বড় ধরনের সমস্যা অনুভব করেন, তবে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এএসপিরিন নিতে পারলে, এটি হৃদপিণ্ডে রক্ত চলাচলের উপর চাপ কমাতে সহায়ক হতে পারে, তবে সব সময় দ্রুত চিকিৎসা পরামর্শ নেয়া জরুরি।
অ্যাম্বুলেন্স কল করুন
যখন আপনি হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ অনুভব করেন এবং লক্ষণগুলি গুরুতর মনে হয়, যেমন বুকের তীব্র ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, তখন কোনো সময় নষ্ট না করে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স কল করুন। এই মুহূর্তে সময়ের সাথে খেলা চলতে থাকে এবং যত তাড়াতাড়ি আপনি হাসপাতালে পৌঁছাতে পারবেন, তত তাড়াতাড়ি চিকিৎসক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে দ্রুত পৌঁছানোর মাধ্যমে আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। হৃদরোগের ক্ষেত্রে জীবনের সম্ভাবনা অনেকাংশে নির্ভর করে কত দ্রুত চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাচ্ছে তার উপর। যদি সম্ভব হয়, হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে CPR (Cardiopulmonary Resuscitation) দেয়ার জন্য প্রশিক্ষিত একজনের সাহায্য নিন, যা জীবন বাঁচাতে কার্যকর হতে পারে।
চিকিৎসকের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করুন
যদি আপনি মনে করেন হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো হালকা, তবে সেক্ষেত্রে দেরি না করে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তিনি আপনার লক্ষণগুলো মূল্যায়ন করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষার ব্যবস্থা করবেন, যেমন ECG বা এনজিওগ্রাম, যাতে হৃদপিণ্ডের অবস্থা সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায়। চিকিৎসক হৃদরোগের আগাম লক্ষণ দেখে সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন। আপনার লক্ষণ যেকোনো সময় বড় আকার ধারণ করতে পারে, তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

অতিরিক্ত মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন
হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে মানসিক চাপ বা উদ্বেগ একেবারেই এড়িয়ে চলুন। মনোযোগের মধ্যে থাকুন, শারীরিক কাজের চাপ কমান এবং চিন্তাভাবনায় ভারসাম্য রাখুন। অতিরিক্ত মানসিক চাপ হৃদরোগের লক্ষণগুলোর তীব্রতা বাড়াতে পারে, বিশেষ করে শরীরে হরমোনাল পরিবর্তন, উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। রিল্যাক্সেশনের জন্য আপনার শখের কিছু কাজ করুন, গভীরভাবে শ্বাস নিন, অথবা ধ্যান করার চেষ্টা করুন। এই ধরনের মানসিক শান্তি আপনাকে শরীরের অবস্থাকে আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করবে।
পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে রাখুন
আপনি যখন হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ অনুভব করবেন, তখন অবিলম্বে আপনার পরিবারের সদস্য বা কাছের বন্ধুকে বিষয়টি জানান। এই মুহূর্তে আপনাকে একা থাকতে হবে না এবং তাদের উপস্থিতি আপনার মানসিক সমর্থন বাড়াবে। দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স বা চিকিৎসকের সাহায্য পাবার ক্ষেত্রে তারা আপনার পাশে থাকবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সহায়ক হবে। এছাড়া, যদি কোনো কারণে আপনার চেতনা লুপ্ত হয়ে যায়, তবে পরিবার বা বন্ধুদের সাহায্য আপনার জীবন বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ চিনতে এবং দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারলে, আপনি জীবন রক্ষাকারী ভূমিকা রাখতে পারেন। সচেতনতা, দ্রুত ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যগত পদ্ধতির মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। এর ফলে, আপনি শুধু আপনার নিজেকে নয়, আপনার প্রিয়জনদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন।
উপসংহার
মনে রাখবেন, যত দ্রুত আপনি হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ চিহ্নিত করবেন, ততই আপনার সুস্থতার সম্ভাবনা বাড়বে। হার্ট অ্যাটাকের মতো গুরুতর পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে উপযুক্ত জীবনযাত্রা, সঠিক ডায়েট এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিকল্প নেই। হ্যাঁ, সচেতনতা এবং অবহেলা না করার মাধ্যমে আপনি অনেকখানি ঝুঁকি কমাতে পারেন। তবে হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ চিহ্নিত করার মাধ্যমে আপনি নিজের জীবনকে আরও নিরাপদ রাখতে পারবেন- তাই এ বিষয়ে কোনো ধরনের ঝুঁকি নেবেন না। আমাদের আজকের এই ছোট্ট প্রয়াস যদি আপনার সামান্যতম উপাকারে আসে, তবেই আমাদের সকল পরিশ্রম সার্থক। ধন্যবাদ এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য।