বুকের মধ্যভাগে হঠাৎ তীব্র ব্যথা, শ্বাস নিতে কষ্ট এবং কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর একটি মুহূর্ত এসে হাজির -এটাই হৃদরোগের এক নির্মম বাস্তবতা! বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর প্রায় ১.৮ কোটি মানুষ হৃদরোগের কারণে মারা যায়, যা বৈশ্বিক মৃত্যুর প্রায় ৩১%। শুধু বাংলাদেশেই প্রতিবছর দেড় লক্ষাধিক মানুষ হৃদরোগজনিত কারণে প্রাণ হারায়। অথচ, জানলে অবাক হতে হয়- এই প্রাণঘাতী রোগের ৮০% ক্ষেত্রেই প্রতিরোধ সম্ভব! কিন্তু আমরা কি জানি, কীভাবে আমাদের জীবনযাপনই এই মরণব্যাধি হৃদরোগের কারণ? সত্যিই কি হৃদরোগ শুধু বয়স্কদের সমস্যা? আজকের এই লেখায় আমরা হৃদরোগের বিষয়ে জানা-অজানা কথা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
হৃদরোগ শুধু একটি রোগ নয়, বর্তমানে এটি এক মহামারির রূপ নিয়েছে। আধুনিক জীবনযাত্রার চাপ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, মানসিক উদ্বেগ, এমনকি বায়ুদূষণও হৃদরোগের অন্যতম কারণ হতে পারে। অনেকেই মনে করেন, হৃদরোগ মানেই হার্ট অ্যাটাক, কিন্তু বাস্তবে স্ট্রোক, হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট, হার্ট ফেইলিওরসহ আরও বহু জটিলতা হৃদরোগের অন্তর্ভুক্ত।
হৃদরোগ সম্পর্কে জানা সকলের জন্য কেন জরুরি?
হৃদরোগ সম্পর্কে জানা সকলের জন্য জরুরি, কারণ এটি বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি। আধুনিক জীবনযাত্রার পরিবর্তনের ফলে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং ধূমপানসহ নানা কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে। যদি মানুষ হৃদরোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতন হয়, তবে তারা সহজেই জীবনধারায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনে এই প্রাণঘাতী রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল বৃদ্ধি ও ডায়াবেটিসের মতো হৃদরোগের প্রভাবকগুলো সম্পর্কে সচেতনতা হৃদরোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়া, হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ যেমন বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তি বা মাথা ঘোরা সম্পর্কে জানা থাকলে জরুরি পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়, যা অনেক ক্ষেত্রেই জীবন বাঁচাতে পারে। অনেক মানুষ সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ না নেওয়ার কারণে মারাত্মক জটিলতায় ভোগেন। তাই হৃদরোগ সম্পর্কিত জ্ঞান শুধু ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের জন্য নয়, বরং পরিবারের অন্য সদস্য ও আশপাশের মানুষের সুস্থতার জন্যও অপরিহার্য। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান ও অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা—এই অভ্যাসগুলো গড়ে তুলতে পারলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
হৃদরোগের মূল কারণসমূহ
হৃদরোগ সাধারণত বিভিন্ন কারণের সমন্বয়ে ঘটে, যা জীবনধারা, জিনগত বৈশিষ্ট্য এবং পরিবেশগত প্রভাবের সঙ্গে সম্পর্কিত। নিচে হৃদরোগের প্রধান কারণসমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো-
উচ্চ রক্তচাপ
উচ্চ রক্তচাপকে “নীরব ঘাতক” বলা হয়, কারণ এটি ধীরে ধীরে ধমনীগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। যখন রক্তচাপ দীর্ঘ সময় ধরে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি থাকে, তখন এটি ধমনীর দেয়ালে চাপ সৃষ্টি করে, যা ধমনীগুলোকে শক্ত করে ফেলে এবং সংকুচিত করে দেয়। এর ফলে হৃদযন্ত্রকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কাজ করতে হয়, যা একসময় হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। উচ্চ রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত থাকলে এটি হৃদযন্ত্রের পাশাপাশি কিডনি ও মস্তিষ্কের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলে, যার ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও কিডনি বিকল হওয়ার মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ, মানসিক চাপ, স্থূলতা, ধূমপান, মদ্যপান ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাব অন্যতম।
উচ্চ কোলেস্টেরল
কোলেস্টেরল আমাদের শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও অতিরিক্ত কোলেস্টেরল হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ। যখন রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের (LDL) মাত্রা বেড়ে যায়, তখন এটি ধমনীর দেয়ালে জমা হয়ে প্লাক তৈরি করে, যা ধমনীকে সংকীর্ণ করে দেয় এবং রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে। একসময় এই জমে থাকা প্লাক ফেটে গিয়ে রক্ত জমাট বাঁধার (blood clot) সৃষ্টি করতে পারে, যা হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের কারণ হতে পারে। ফাস্ট ফুড, বেশি তেল-চর্বিযুক্ত খাবার, প্রসেসড ফুড ও ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে শারীরিক পরিশ্রমের অভাব ও ধূমপানও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে বাধা সৃষ্টি করে। তাই হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে খাবারে স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের পরিমাণ বাড়ানো এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করা জরুরি।
ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিস সরাসরি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়, কারণ এটি রক্তনালীগুলোর স্থিতিস্থাপকতা কমিয়ে দেয় এবং রক্তপ্রবাহ ব্যাহত করে। দীর্ঘমেয়াদে অনিয়ন্ত্রিত রক্তের গ্লুকোজ হৃদপিণ্ড ও ধমনীর ক্ষতি করে, যার ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক ও অন্যান্য জটিলতা দেখা দিতে পারে। টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যা বেশি দেখা যায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে তোলে। অতিরিক্ত মিষ্টি ও কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার গ্রহণ, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, স্থূলতা ও জিনগত কারণ ডায়াবেটিসের জন্য দায়ী। তাই নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষা করা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা এবং শারীরিক কার্যক্রম বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ধূমপান ও মদ্যপান

ধূমপান হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ, কারণ এতে থাকা নিকোটিন ও অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ রক্তনালীগুলোকে সংকুচিত করে এবং ধমনীর দেয়ালে প্লাক তৈরি করে। এর ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং হৃদযন্ত্রের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। ধূমপান হৃদযন্ত্রের অক্সিজেন গ্রহণ ক্ষমতাও কমিয়ে দেয়, যার ফলে হার্টের কার্যক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। অপরদিকে অতিরিক্ত মদ্যপান রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা হৃদরোগের কারণ হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপান ও মদ্যপান হৃদরোগের পাশাপাশি স্ট্রোক ও কিডনির সমস্যার ঝুঁকিও বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। তাই সুস্থ হৃদযন্ত্রের জন্য ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণ সম্পূর্ণ পরিহার করা জরুরি।
স্থূলতা ও অতিরিক্ত ওজন
অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা হৃদরোগের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়, কারণ এটি উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে। স্থূল ব্যক্তিদের শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমা হয়, যা রক্তনালীগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করে। এছাড়া, অতিরিক্ত ওজনের কারণে শরীরের মেটাবলিজমের হার কমে যায়, যা কোলেস্টেরল ও গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করতে বাধা দেয়। স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করা, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ। উচ্চমাত্রার চর্বি, লবণ ও চিনি সমৃদ্ধ খাবার রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা ধমনীগুলোকে সরু করে এবং রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে। বিশেষ করে, ফাস্ট ফুড, প্রসেসড ফুড, সফট ড্রিংকস, ট্রান্স ফ্যাট ও চিপস জাতীয় খাবার নিয়মিত খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে, ফলমূল, শাকসবজি, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ মাছ এবং উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী। তাই হৃদরোগ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।
শারীরিক পরিশ্রমের অভাব
শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামের অভাব হৃদরোগের অন্যতম বড় কারণ। নিয়মিত ব্যায়াম করলে রক্তসঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয় এবং কোলেস্টেরল কম থাকে। কিন্তু যদি কেউ দীর্ঘসময় ধরে শারীরিক পরিশ্রম এড়িয়ে চলে, তাহলে ধমনীগুলো শক্ত হয়ে যায়, রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং হৃদপিণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে। এছাড়া, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার কারণে স্থূলতা, ডায়াবেটিস ও মানসিক চাপের সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
অতিরিক্ত মানসিক চাপ
অতিরিক্ত মানসিক চাপ হৃদরোগের অন্যতম গোপন কারণ। দীর্ঘসময় ধরে মানসিক চাপ থাকলে শরীরে কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিন হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়, যা রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়। এই অবস্থায় রক্তনালী সংকুচিত হয়ে যায় এবং হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা কমে যায়। এছাড়া, মানসিক চাপের কারণে অনেকেই ধূমপান, অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ ও অনিয়মিত জীবনযাপন শুরু করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়।
জিনগত কারণ
যাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে হৃদরোগের ইতিহাস রয়েছে, তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। জিনগতভাবে উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল বা ডায়াবেটিসের প্রবণতা থাকলে তা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই পারিবারিক ইতিহাস থাকলে আগেভাগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব (Lack of Sleep)
অপ্রতুল ঘুম হৃদরোগের অন্যতম গোপন কারণ। রাতে পর্যাপ্ত ঘুম না হলে রক্তচাপ বেড়ে যায়, শরীরে স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টার কম ঘুম হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা হৃদরোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ
কাদের হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি?
হৃদরোগের ঝুঁকি নির্ধারণে বিভিন্ন উপাদান ভূমিকা পালন করে, যেমন বয়স, লিঙ্গ, জীবনধারা এবং স্বাস্থ্যগত অবস্থা। বয়সের সাথে সাথে হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে, ৪৫ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ এবং ৫৫ বছরের বেশি বয়সী নারীদের মধ্যে এই ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। ধূমপান হৃদরোগের একটি প্রধান ঝুঁকিপূর্ণ কারণ। বাংলাদেশে হৃদরোগের উচ্চ মৃত্যুহারের পেছনে তামাকের ব্যবহার, অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ, স্থূলতা এবং পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়া উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। [সোর্স-১]
জিনগত কারণও হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। যাদের পরিবারে হৃদরোগের ইতিহাস রয়েছে, তাদের মধ্যে এই ঝুঁকি বেশি। এছাড়া, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস এবং স্থূলতা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। বাংলাদেশে, ২০২১ সালে হার্ট অ্যাটাকের কারণে ১৭.৪৫% মৃত্যু হয়েছে, যা দেশের মোট মৃত্যুর একটি বড় অংশ। [সোর্স-২]
হৃদরোগ কি শুধু বয়স্কদের হয়?
হৃদরোগকে সাধারণত বয়স্কদের রোগ হিসেবে বিবেচনা করা হলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তরুণদের মধ্যেও হৃদরোগের প্রকোপ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশে মোট মৃত্যুর ১৭.৪৫ শতাংশ ঘটেছে হার্ট অ্যাটাক ও হৃদরোগে। এর মধ্যে হৃদরোগে ৩.৬৭ শতাংশ এবং অন্যান্য কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৩.৭৮ শতাংশ মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, আধুনিক জীবনযাপনে অসংগত পরিবর্তন ও শারীরিক নিষ্ক্রিয়তাই হলো হার্ট ও রক্তনালীতে সমস্যা বেড়ে যাওয়ার দুটি বড় কারণ। সোর্স-৩ সোর্স-৪
তরুণদের মধ্যে হৃদরোগ বৃদ্ধির পেছনে বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন, উচ্চ কোলেস্টেরল মাত্রা, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, আসীন জীবনধারা, পারিবারিক ইতিহাস এবং মানসিক চাপের উচ্চ মাত্রা উল্লেখযোগ্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কারণগুলোর সংমিশ্রণ তরুণদের হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। সোর্স-৫
হৃদরোগের যেসব লক্ষণ সাধারণত উপেক্ষিত হয়
হৃদরোগের কিছু লক্ষণ প্রায়ই উপেক্ষিত হয়, যা পরবর্তীতে গুরুতর জটিলতার কারণ হতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হলো বুকে হালকা অস্বস্তি বা চাপ অনুভব করা। অনেকেই এই ধরনের অনুভূতিকে গ্যাস্ট্রিক বা হজমজনিত সমস্যা মনে করে এড়িয়ে যান। তবে, এটি হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। এছাড়া, সামান্য পরিশ্রম বা দৈনন্দিন কাজের সময় শ্বাসকষ্ট হওয়া, যা সাধারণত অবহেলা করা হয়, কিন্তু এটি হৃদরোগের ইঙ্গিত হতে পারে।
আরেকটি উপেক্ষিত লক্ষণ হলো বমি বমি ভাব বা বদহজমের অনুভূতি। অনেকেই এটিকে সাধারণ হজমের সমস্যা হিসেবে মনে করেন, কিন্তু এটি হৃদরোগের পূর্বাভাস হতে পারে। এছাড়া, ঘাম হওয়া, মাথা ঘোরা এবং ক্লান্তি অনুভব করাও হৃদরোগের লক্ষণ হতে পারে, যা প্রায়ই অন্য কারণে ঘটে বলে মনে করা হয়। এই ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি?
হৃদরোগের লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে, যদি কেউ বুকের মাঝখানে বা বাঁ পাশে ব্যথা, চাপ বা জ্বালাপোড়া অনুভব করেন, যা কয়েক মিনিট স্থায়ী হয় বা আসা-যাওয়া করে, তাহলে এটি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হতে পারে। অনেক সময় এই ব্যথা কাঁধ, বাহু, গলা, চোয়াল বা পিঠেও ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা অধিক বিপজ্জনক। এ ছাড়া, হঠাৎ করে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট অনুভব করা, অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্ত হয়ে পড়া বা মাথা ঝিমঝিম করা হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার সংকেত হতে পারে। যদি এমন উপসর্গের সঙ্গে ঠান্ডা ঘাম, বমি বমি ভাব বা দুর্বলতা দেখা দেয়, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। অনেকে মনে করেন, শুধু তীব্র ব্যথাই হৃদরোগের সংকেত, কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, মৃদু বা অস্পষ্ট ব্যথাও হার্টের সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। তাই উপসর্গের মাত্রা কম হলেও একে উপেক্ষা করা উচিত নয়।
এছাড়া, যদি কেউ দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগে থাকেন, তবে নিয়মিত হার্ট চেকআপ করা বাধ্যতামূলক। যারা ধূমপান বা অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ করেন, স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভোগেন, তাদেরও হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি থাকে এবং নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষত, যদি ঘন ঘন বুক ধড়ফড় করা, অনিয়মিত হার্টবিট বা মাথা ঘোরা অনুভূত হয়, তবে এটি হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা দুর্বল হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিতে পারে। অনেক সময় মানসিক চাপ বা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাও হৃদরোগের কারণ হতে পারে, তাই যদি কোনো কারণে অবিরাম উদ্বেগ বা বিষণ্নতা অনুভূত হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। চিকিৎসকদের মতে, হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ শুরু হওয়ার এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা শুরু করা গেলে প্রাণহানির ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। তাই কোনো ধরনের সন্দেহজনক লক্ষণ দেখা দিলে অপেক্ষা না করে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ।
বুকে ব্যথা না থাকলেও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে
অনেকেরই ধারণা, হার্ট অ্যাটাক মানেই তীব্র বুকে ব্যথা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সব হার্ট অ্যাটাকে বুকে ব্যথা হয় না। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগী, বৃদ্ধ এবং নারীদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ অনেক সময় প্রচলিত লক্ষণগুলোর মতো স্পষ্ট হয় না। বুকে ব্যথার পরিবর্তে শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তি, বমি বমি ভাব, চোয়াল বা পিঠে ব্যথা, মাথা ঘোরা কিংবা হালকা অস্বস্তি দেখা দিতে পারে। অনেকেই এই লক্ষণগুলোকে সাধারণ শারীরিক দুর্বলতা বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ভেবে অবহেলা করেন, যার ফলে চিকিৎসা নিতে দেরি হয়ে যায় এবং জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, “নীরব হার্ট অ্যাটাক” (Silent Heart Attack) এক ধরনের হার্ট অ্যাটাক যেখানে প্রচলিত তীব্র ব্যথা অনুভূত হয় না, বরং অস্পষ্ট কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। এটি দীর্ঘ সময় অব্যক্ত থেকে হার্টের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। তাই, শুধু বুকে ব্যথা নয়, অন্যান্য অস্বাভাবিক উপসর্গকেও গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। যদি হঠাৎ করে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, শরীর অস্বাভাবিক ক্লান্ত লাগে বা মাথা ঘোরে, তবে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ, প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক চিকিৎসা নিলে হার্ট অ্যাটাকজনিত জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
শুধু উচ্চ কোলেস্টেরল থাকলেই হৃদরোগ হয়?
উচ্চ কোলেস্টেরলকে সাধারণত হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয়, তবে এটি একমাত্র কারণ নয়। কোলেস্টেরল হলো এক ধরনের চর্বি যা আমাদের শরীরের কোষ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কিন্তু অতিরিক্ত কোলেস্টেরল রক্তনালীগুলোর মধ্যে জমা হয়ে ধমনী সংকুচিত করতে পারে, যা রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে এবং হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। তবে শুধু উচ্চ কোলেস্টেরল থাকলেই হৃদরোগ হয় না, বরং অন্যান্য বেশ কিছু কারণ এর সঙ্গে যুক্ত থাকে। যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, স্থূলতা, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা এবং বংশগত কারণগুলোর সমন্বয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যায়। অনেক সময় দেখা যায়, একজনের কোলেস্টেরল স্বাভাবিক মাত্রায় থাকলেও উচ্চ রক্তচাপ বা ধূমপানের কারণে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। আবার অনেকে উচ্চ কোলেস্টেরল নিয়েও দীর্ঘদিন সুস্থ থাকেন, যদি তারা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করেন এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ কারণগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখেন।
এছাড়াও, কোলেস্টেরলের প্রভাব নির্ভর করে এর ধরন ও মাত্রার ওপর। সাধারণত, কোলেস্টেরলকে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়—লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (LDL) বা “খারাপ” কোলেস্টেরল এবং হাই-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (HDL) বা “ভালো” কোলেস্টেরল। LDL বেশি থাকলে এটি ধমনীতে জমতে শুরু করে এবং হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়ায়, অন্যদিকে HDL হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে, কারণ এটি ধমনী থেকে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল অপসারণ করে লিভারে পাঠিয়ে দেয়। তাই শুধুমাত্র উচ্চ কোলেস্টেরল থাকার ভিত্তিতে হৃদরোগ হবে কিনা, তা নির্ভর করে ব্যক্তির সামগ্রিক স্বাস্থ্যগত অবস্থা, জীবনযাত্রার ধরন এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ কারণগুলোর উপস্থিতির ওপর। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সুষম খাদ্য গ্রহণ, শরীরচর্চা এবং জীবনযাত্রার ইতিবাচক পরিবর্তনের মাধ্যমে উচ্চ কোলেস্টেরল থাকলেও হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
হৃদরোগ থাকলে কি ব্যায়াম করা নিষিদ্ধ?
অনেকেই মনে করেন, হৃদরোগ থাকলে ব্যায়াম করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, কিন্তু বাস্তবে এটি সবসময় সত্য নয়। বরং সঠিক ও নিয়ন্ত্রিত ব্যায়াম হৃদরোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে। তবে এটি নির্ভর করে হৃদরোগের ধরণ, রোগের মাত্রা, শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসকের পরামর্শের ওপর। সাধারণত হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম যেমন হাঁটা, হালকা জগিং, সাইক্লিং বা সাঁতার হৃদরোগীদের জন্য ভালো হতে পারে, কারণ এগুলো রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হৃৎপিণ্ডকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। তবে, অত্যন্ত ভারী ব্যায়াম যেমন ভারোত্তোলন, উচ্চ-প্রচেষ্টার কার্ডিও বা খুব বেশি গতিসম্পন্ন দৌড়ানো এড়িয়ে চলা উচিত, বিশেষ করে যদি হৃদরোগ গুরুতর হয় বা আগে হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে। চিকিৎসকের নির্দেশনা ছাড়া হঠাৎ করে কঠোর ব্যায়াম শুরু করা বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ এটি রক্তচাপ দ্রুত বাড়িয়ে দিতে পারে এবং হৃৎপিণ্ডে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

হৃদরোগ থাকলে ব্যায়াম করার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসক রোগীর শারীরিক সক্ষমতা অনুযায়ী উপযুক্ত ব্যায়ামের ধরন ও মাত্রা নির্ধারণ করবেন। সাধারণত, ব্যায়ামের সময় যদি বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা মাথা ঘোরা অনুভূত হয়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যায়াম বন্ধ করে বিশ্রাম নিতে হবে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। ধাপে ধাপে ব্যায়ামের মাত্রা বাড়ানো উচিত এবং হঠাৎ করে কঠোর ব্যায়াম শুরু করা উচিত নয়। সবচেয়ে ভালো হয় যদি হৃদরোগীরা বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে “কার্ডিয়াক রিহ্যাবিলিটেশন” প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন, যেখানে বিশেষজ্ঞদের নির্দেশনা অনুযায়ী ধাপে ধাপে উপযুক্ত ব্যায়াম করানো হয়। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম হৃদরোগীদের সুস্থ রাখার পাশাপাশি মানসিক চাপ কমাতে ও জীবনযাত্রার গুণগত মান বাড়াতে সাহায্য করে, তবে এটি অবশ্যই সতর্কতার সঙ্গে এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে করতে হবে।
কেবল পুরুষেরাই কি হৃদরোগে বেশি আক্রান্ত হয়?
অনেকেরই ভুল ধারণা যে হৃদরোগ কেবল পুরুষদের জন্য বেশি বিপজ্জনক, কিন্তু বাস্তবে নারী ও পুরুষ উভয়েরই হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় সমান, বিশেষ করে মেনোপজের পর নারীদের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। তরুণ বয়সে নারীদের শরীরে এস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাবের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম থাকে, কারণ এটি রক্তনালীগুলোর সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এবং মেনোপজের পর যখন এস্ট্রোজেনের মাত্রা কমতে থাকে, তখন রক্তনালীর স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস পায়, কোলেস্টেরল জমতে শুরু করে, উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাছাড়া, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান ও মানসিক চাপের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কারণগুলো নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, নারীরা হৃদরোগের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন নন এবং অনেক সময় তারা উপসর্গগুলোকে অন্য অসুস্থতার সঙ্গে মিলিয়ে ফেলে, যা সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণে বিলম্ব ঘটায়।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পুরুষ ও নারীর হৃদরোগের উপসর্গ সবসময় একই রকম হয় না। সাধারণত পুরুষদের ক্ষেত্রে হৃদরোগের প্রধান লক্ষণ হিসেবে বুকে তীব্র ব্যথা দেখা যায়, যা সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব। কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে উপসর্গগুলো অনেক সময় ধীরে ধীরে প্রকাশ পায় এবং সাধারণ অসুস্থতা বলে মনে হতে পারে। যেমন—বমিভাব, পিঠ বা চোয়ালে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, অস্বাভাবিক ক্লান্তি, মাথা ঘোরা বা হালকা অস্বস্তি, যা হৃদরোগের লক্ষণ হলেও অনেক নারী এগুলোকে গ্যাস্ট্রিক বা দুশ্চিন্তার সমস্যা বলে ভুল করেন। ফলে নারীরা চিকিৎসকের কাছে দেরিতে যান, যার ফলে হৃদরোগ মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে। তাই নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই সচেতনতা জরুরি, বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে অপ্রচলিত উপসর্গগুলোর বিষয়ে জানার প্রয়োজন রয়েছে, যাতে সময়মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়।
উপসংহার
হৃদরোগের বিষয়ে জানা-অজানা অনেক কিছুই আছে। আর এর মানে শুধু রোগটি সম্পর্কে সচেতন হওয়া নয়, বরং এটি প্রতিরোধের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। পরিসংখ্যান বলছে, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান ও অতিরিক্ত মানসিক চাপ পরিহার করলে ৮০% হৃদরোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব! কিন্তু দুঃখজনকভাবে, সচেতনতার অভাবে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ অল্প বয়সেই হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এখন সময় আমাদের জীবনধারায় পরিবর্তন আনার এবং হৃদরোগ প্রতিরোধের দিকে মনোযোগী হওয়ার। কারণ, একটি সুস্থ হৃদয়ই পারে আপনাকে দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন দিতে! আমাদের আজকের আলোচনা থেকে সামান্য উপকৃত হলেও সেটাই হবে আমাদের সার্থকতা। ধন্যবাদ।